Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১৬ মার্চ ২০২৫

একাডেমির ইতিহাস ও কার্যাবলি

একাডেমির সৃষ্টি থেকে বর্তমান কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা পর্যালোচনা

 

১।      ভূমিকা (Introduction):   মেরিন ফিশারিজ একাডেমি বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি মেরিটাইম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যে প্রতিষ্ঠানে দেশি/বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ ও দেশিয় ফিশিং ট্রলারের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের কারিগরি সহায়তায় অত্র একাডেমি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শুরুতে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (BFDC) এর অধীনে পরিচালিত গভীর সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলারের জন্য প্রশিক্ষিত নেভিগেটর, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ও ফিশ প্রসেসিং টেকনোলজিস্ট তৈরিই ছিল একাডেমির উদ্দেশ্য। শুরুতে একাডেমিতে বছরে মাত্র ৩০ জন ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হলেও বর্তমানে নটিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেরিন ফিশারিজ বিভাগে প্রতি ব্যাচে ১১০ জন ক্যাডেট ২ বছর মেয়াদি প্রি-সী ট্রেনিং এর জন্য ভর্তি করা হয়।

 

২।       একাডেমি প্রতিষ্ঠার ইতিহাস (Historical Background):

 

ক।      ১৯৭৩ সনে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক রাশিয়ান সরকারের দক্ষ জনবলসহ কারিগরী সহযোগিতায় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের পরিচালনাধীনে ‘মেরিন ফিশারিজ একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

 

খ।       ১৯৮৩ সালে এ একাডেমি পরিচালনার দায়িত্ব নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন চট্টগ্রামস্থ মেরিন একাডেমির অধীনে ন্যস্ত করা হয়।

 

গ।       ১৯৮৬ সালে একাডেমিকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় তথা মেরিন একাডেমি থেকে প্রত্যাহার করতঃ পুনরায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রাণাধীনে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের অধীনে ন্যস্ত করা হয়।

 

ঘ।       ১৯৮৮ সালে এ একাডেমির পরিচালনার দায়িত্ব বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশান থেকে প্রত্যাহার করতঃ সরাসরি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যস্ত করা হয়।

 

ঙ।       প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৩০ জুন ১৯৯৩ পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ একাডেমি পরিচালিত হয়।

 

চ।       ০১ জুলাই ১৯৯৩ সাল থেকে মেরিন ফিশারিজ একাডেমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব বাজেটভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে।

৩।     একাডেমির কর্মপরিধি (Scope):  একাডেমির মূল কর্মপরিধি হলোঃ

 

ক।      গভীর সমুদ্রগামী মৎস্য আহরণকারী জাহাজ/ট্রলার ও সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজ চালনা, জাহাজের ইঞ্জিন অপারেশন, জাহাজ নির্মাণ ও মেরামত শিল্প, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও মাননিয়ন্ত্রণ শিল্প ইত্যাদি সেক্টরের জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ার উদ্দেশ্যে প্রি-সী ট্রেনিংসহ স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা।

 

খ।       সমুদ্রে মৌলিক নিরাপত্তা বিষয়সহ অন্যান্য আবশ্যকীয় বিষয়ে নৌ-কর্মকর্তা ও নাবিকদের এনসিলিয়ারি ট্রেনিং প্রদান করা।

 

গ।       সমুদ্রগামী মৎস্য আহরণকারী জাহাজ/ট্রলার এবং সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজ এ নিয়োজিত অফিসারদের সার্টিফিকেট অব কম্পিটেন্সী পরীক্ষার প্রস্তুতির নিমিত্তে রিফ্রেশার্স কোর্স পরিচালনা করা ।

 

 

৪।       একাডেমির প্রশিক্ষণ (Training Curriculum):

 

একাডেমি

On Board

একাডেমি

মন্তব্য

০২ বছরের প্রি-সী ট্রেনিং কোর্স।

৩য় বর্ষে ক্যাডেটদের ০১ বছরের জন্য সমুদ্রগামী জাহাজে On Board ট্রেনিং গ্রহণ করতে হয়।

৪র্থ বর্ষে ক্যাডেটরা On Board ট্রেনিং শেষে ০৪ বছর মেয়াদী অনার্স সম্পন্ন করার জন্য চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।

২০১৮ সাল হতে বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি এর অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসবে বিএসসি অনার্স ডিগ্রী প্রদান করা হচ্ছে।

 

৫।       পাশকৃত ক্যাডেটদের পরিসংখ্যান (Statistics of Ex-Cadets):     অত্র একাডেমি হতে এ যাবৎ ৭৭জন মহিলা (নটিক্যাল সায়েন্স ৩ জন, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ২৪ জন ও মেরিন ফিশারিজ ৫০জন) ক্যাডেটসহ সর্বমোট প্রায় ২২৪৩ জন ক্যাডেট প্রি-সী ট্রেনিং সম্পন্ন করে সনদপ্রাপ্ত হয়েছে। তবে ১৯৯৯-২০০০ সন হতে স্নাতক কোর্সে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি লাভ করায় এ সময় হতে প্রি-সী ট্রেনিং সনদ প্রদানের পাশাপাশি বিএসসি (পাস) নটিক্যাল, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেরিন ফিশারিজ ডিগ্রীসহ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ হতে বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি এর অধিভুক্তি লাভ করে ০৪ বছর মেয়াদী অনার্স ডিগ্রী প্রদান করা হয়। অদ্যাবধি (ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত) ০৭জন মহিলাসহ মোট ৬৫জন ০৪ বছর মেয়াদী বিএসসি অনার্স ডিগ্রী কোর্স সম্পন্ন করেছে।

 

৬।      একাডেমির বর্তমান ক্যাডেট সংখ্যা (Statistics of Existing Cadets):

 

ব্যাচ

প্রশিক্ষণ কোর্সের শিরোনাম

মোট

বিএসসি (অনার্স) ইন নটিক্যাল স্টাডিজ

বিএসসি ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং

বিএসসি (অনার্স) ইন মেরিন ফিশারিজ

পুরুষ

মহিলা

পুরুষ

মহিলা

পুরুষ

মহিলা

৪৪তম

(২য় বর্ষ/১ম সেমিস্টার)

৩৮

০২

৩২

০৮

২৪

০৬

১১০

৪৫তম

(১ম বর্ষ/১ম সেমিস্টার)

৩৫

০৫

৩৭

০৩

২২

০৮

১১০

মোট

৭৩

০৫

৬৫

১৩

৫০

১০

২২০

 

৭।      একাডেমির বর্তমান জনবলের সংখ্যা (Manpower):

 

মঞ্জুরীকৃত পদ সংখ্যা

কর্মরত জবলের সংখ্যা

শূন্য পদের সংখ্যা

শূন্যপদ পূরণে গৃহীত উদ্যোগ

১ম শ্রেণি

১৬

১ম শ্রেণি

১৩ (নিয়মিত-৯

প্রেষণে-৪)

১ম শ্রেণি

বি.পি.এস.সি-তে নিয়োগের কাজ চলমান আছে। 

২য় শ্রেণি

২য় শ্রেণি

২ (নিয়মিত-২)

২য় শ্রেণি

পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণের কার্যক্রম চলমান

৩য় শ্রেণি

২০

৩য় শ্রেণি

১৯

৩য় শ্রেণি

পূরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে

৪র্থ শ্রেণি

২৪

৪র্থ শ্রেণি

২১ (নিয়মিত -১৮

আউটসোর্সিং-৩)

৪র্থ শ্রেণি

আউটসোর্সিং এর জন্য  প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। 

আউটসোর্সিং

৩৮

আউটসোর্সিং

৩৪

-

পূরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে

ভিজিটিং লেকচারার

১২২

-

-

 

নবসৃষ্ট পদ

একাডেমির রাজস্বখাতে ২৫ (পঁচিশ) ক্যাটাগরি অনুকূলে ৩১টি পদ সৃজনের পৃষ্ঠাঙ্কন হয়েছে এবং পূর্ণাঙ্গ নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ণের কাজ চলমান রয়েছে।

 

 

৮।      একাডেমির প্রশিক্ষণ ও দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা (Steering Committee of Academy's Training and Official Activities): নিম্নবর্ণিত কমিটিসমূহের মাধ্যমে বর্তমানে একাডেমির প্রশিক্ষণ ও দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকেঃ

 

          ক।      মেরিন ফিশারিজ একাডেমি, চট্টগ্রাম-এর গভর্নিং বডি।

          খ।       মেরিন ফিশারিজ একাডেমি, চট্টগ্রাম-এর একাডেমিক কাউন্সিল।

          গ।       ক্যাডেটদের শৃঙ্খলা বিধি (Code of Conduct for MFA Cadets)।

          ঘ।       বোর্ড অব স্টাডিজ।

 

৯।       জাতীয় অর্থনীতিতে একাডেমির ভূমিকা (Contribution in National Economy):   একাডেমি হতে পাশকৃত ২২৪৩ জন ক্যাডেটের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক ক্যাডেট বর্হিবিশ্বে বাণিজ্যিক জাহাজসমূহে কর্মরত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। এছাড়ও মেরিন ফিশারিজ বিভাগ হতে পাশকৃত ক্যাডেটরা দেশীয় ফিশিং ট্রলার, ফিশ প্রসেসিং টেকনোলজিস্ট ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা, মৎস্য ও চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও সার্ভেয়ার হিসেবে যোগদান করে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ভিতকে সমৃদ্ধশালী করছে।

 

১০।     একাডেমির ভবিষ্যত উন্নয়ন পরিকল্পনা (Future Development Plan):    একাডেমির প্রশিক্ষণ সুবিধা যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে মেরিন ফিশারিজ একাডেমিতে ‘ফায়ার ফাইটিং সিমুলেটর’ স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও “মেরিন ও ব্রীজ সিমুলেটর” স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও একাডেমির মাস্টার প্ল্যান তৈরির কার্যক্রম স্থাপত্য অধিদপ্তরে প্রস্তুতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

 

১১।     ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতিতে একাডেমির অবদান (Contribution to Blue Economy):     বাংলাদেশ একটি সমুদ্র উপকূলীয় দেশ। ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল লাইন এবং ১,১৮,৮১৩ বর্গ.কি. এরও বেশি একান্ত অর্থনৈতিক এলাকা আচ্ছাদিত সুনীল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের টেকসই অনুশীলনের জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত সম্ভাবনাময় অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ অনুসন্ধান, আহরণ ও টেকসই ব্যবহারের সাথে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়টি খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। মেরিন ফিশারিজ একাডেমি একমাত্র জাতীয় পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, যেখানে সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান, আহরণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং টেকসই সংরক্ষণ ও ব্যবহারের বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে দক্ষ জনশক্তি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এছাড়াও  ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তা নিরীক্ষায় সমুদ্র তলদেশকে কাজে লাগিয়ে মেরিকালচার প্রযুক্তির সম্প্রসারণকরণ এবং সমুদ্র তলদেশ হতে হাইড্রো-কার্বন সম্পদ ছাড়াও ম্যাঙ্গানিজ নডিউল ও অন্যান্য মূল্যবান সমুদ্র সম্পদ আহরণের কৌশল উপর একাডেমিক গবেষণা পরিচালনা করা হবে।

 

১২।     উপসংহার (Conclusion):    মেরিন ফিশারিজ একাডেমি-সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ, সংরক্ষণ, মান নিয়ন্ত্রণ এবং নৌ-বাণিজ্যিক সেক্টরের জন্য দক্ষ জনশক্তি উৎপাদনকারী দেশের অন্যতম পেশাভিত্তিক মেরিটাইম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ একাডেমি হতে উত্তীর্ণ ক্যাডেটগণ একদিকে গভীর সমুদ্রগামী ফিশিং জাহাজ/ ট্রেলার, জাহাজ নির্মাণকারী/ মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ইত্যাদি সেক্টরে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নসহ আপামর জনসাধারণের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। অন্যদিকে বাণিজ্যিক জাহাজসহ দেশী বিদেশী মেরিটাইম সেক্টরে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে জাতীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। কিন্তু অত্র একাডেমির সৃষ্টি লগ্ন থেকে কোন আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় অত্র প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতির জন্য একটি আইন প্রণয়ন পূর্বক উক্ত আইনের দ্বারা স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে একাডেমির সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার নিমিত্ত একটি মেরিন ফিশারিজ একাডেমির জন্য ‘গভর্নিং ল’ প্রণয়ন করা আবশ্যক।

 

------ ˟-------